এস.এ.এম সুমন
সম্পাদক ,পাক্ষিক আনন্দ বিনোদন।
লাইট, ক্যামেরা, এ্যাকশন………কাট ! দর্শক শুধু এ্যাকশন আর কাটের মধ্যবর্তী অংশটুকুই দেখেন দৃশ্যায়নের এই অংশের বাইরে দর্শকের দৃষ্টির অগোচরে রয়ে যায় অনেক কিছুই । তিন মাস কষ্ট করে বানায় ৩ ঘন্টার সিনেমা কতটা সময়,কতটা মেধা কাজে লাগিয়ে, কতটা শ্রমের ফসল এক একটি সফল চলচ্চিত্র বা নাটক তা বিছানায় অলসে শুয়ে কিমবা সোফায় বসে পা নাচিয়ে নাচিয়ে টিভি সেটের সামনে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব হয় না একজন সাধারন দর্শকের পক্ষে । একেকটি নাটক বা সিনেমায় একটি গল্পকে কেন্দ্র করে কাহিনী আবর্তিত হয় । কিন্তু সেই গল্পের পিছনেও গল্প থাকে, কাহিনীর পেছনেও থাকে কাহিনী । সেই গল্পের চিত্রনাট্য তৈরি হয় ক্যামেরার পিছনে, সেই কাহিনীর মঞ্চায়ন হয় দর্শকের অগোচরে আর সেখানে কুশীলব হন ডিরেক্টর থেকে শুরু করে যে ছেলেটি চা নিয়ে সবার কাছে ছুটে বেড়ায় সেও । দর্শক যে দৃশ্যটি দেখবে সেটি প্রস্তুত করতে গিয়েও ঘটে কত শত ঘটনা ! হাসির যে দৃশ্যটি দেখে দর্শক হাসির দমকে গড়াগড়ি খেয়েছেন সে দৃশ্যটি ওকে করতে গিয়ে ডিরেক্টরের মেজাজ হয়তো চড়তে চড়তে ধৈর্যের চূড়ায় পৌছে গেছে । কাট বলতে হয়েছে একাধিক বার আর ওদিকে বেচারা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হয়তো কাঁদোকাঁদো হয়ে মনে মনে বলেছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ! আবার হৃদয়স্পর্শী কোন দৃশ্যের শুটিং করতে গিয়ে অভিনেতা বা অভিনেত্রী হয়তো চরিত্রের সাথে এতটাই একা হয়ে মিশে গিয়েছেন যে কৃত্রিম কান্নার জন্য গ্লিসারিনের প্রয়োজন হয় নি তার । স্বাভাবিক ভাবেই যেন তার চোখে অশ্র“ ঝরেছে । আর তার অভিনয় এতটাই ‘বাস্তব’ হয়েছে যে তার কান্না দেখে কেঁদেছে শুটিং স্পটে উপস্থিত সবাই । অভিনেতা বা অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি এইসব শিল্পীদের আলাদা একটা জীবন রয়েছে । যে জীবনে তারা ক্যামেরা ছাড়াই অন্য সবার মত করে হাসেন, কাঁদেন । তবে ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবন এই দুয়ের মাঝে শক্ত একটি দেয়াল গড়ে রাখতে পারেন অনেক শিল্পী । ব্যক্তিগত জীবনের প্রচন্ড ঝড় তদের কাবু করে ঠিকই কিন্তু দমিয়ে রাখতে পারে না । তাদের উপর দিয়ে আঘাতের খরস্রোত বয়ে গেলেও নির্ধারিত শিডিউলে তারা দাঁড়ান ক্যামেরার সামনে । আমাদের দেশেই এমন নজির আছে অভিনেতা তার সব চাইতে প্রিয় মানুষটির কাছ থেকে চির দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে…ডিভোর্স পেপারে সাইন করে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে দর্শক হাসানোর অভিনয় করেছেন । তার ভিতরের সত্বাটা তখন বিষাদে পূর্ণ, ভেঙে পরেছেন পুরোপুরি কিন্তু বুঝতে পারেনি কেউ, না সহশিল্পী না দর্শক ! নাটক বা সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে সহ শিল্পীদের সাথে খুনসুটি চলে, কখনো রাগারাগি হয় মান অভিমানের পালা চলে আবার কারো মধ্যস্থতায় মিলে যায় সবাই । দীর্ঘদিন একই শুটিং সেটে থেকে একসাথে কাজ করে এর কলাকুশলীদের মধ্যে স¤পর্ক ঘনিষ্ঠ হয় । একে অন্যের কাছে তারা হয়ে যান পরিবারের সদস্যের মতই । তবুও একদিন ফুরিয়ে আসে স্ক্রিপ্টের ডায়লগ, শেষ হয়ে যায় দৃশ্য । শুটিংয়ের একদম শেষ দিন ডিরেক্টর কাট বলে শুটিং ফাইনাল প্যাক আপ করেন বটে কিন্তু এই নির্মাণের পিছনের অনেক গল্পই থেকে যায় অসমাপ্ত !