পৃথিবীর অবাক করা সুন্দর মসজিদের ১০টি

0
1153

 ইসলামী শাসন ব্যবস্থা যত দূরেই গেছে, সেখানেই স্থাপন করা হয়েছে মসজিদ। প্রায় ১৩০০ বছর এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অঞ্চল ছিল ইসলামের ছায়ায়। সে সময় সারা বিশ্বে নির্মিত হয় অসংখ্য সুন্দর সুন্দর মসজিদ। আজ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অবাক করা সুন্দর সেসব মসজিদ থেকে ১০টি তুলে ধরা হল আজকের আয়জনে—

তাজ উল মসজিদ, ভারত

বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদের তালিকা করা হবে আর সেখানে ভারতের তাজ উল মসজিদ থাকবে না, তা কি হয়? তাজ উল মসজিদ এর অর্থ হচ্ছে মসজিদের মুকুট। এই মসজিদটি ভারতের ভুপালে অবস্থিত। এটি মুঘল আমলে নির্মাণ করা হয়। মুঘল আমলের নানা নিদর্শন এই মসজিদ নির্মাণকাজের মধ্যে পাওয়া যায়। মসজিদটি ইসলাম শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয় এখনো। এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সুন্দর ও বড় মসজিদ এই তাজ উল মসজিদ।

ফয়সাল মসজিদ (পাকিস্তান)

পাকিস্তানের ইসলামাবাদের সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি। আয়তনে এটি পৃথিবীর সব মসজিদের মধ্যে ৪র্থ। তবে ১৯৮৬-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই মসজিদটি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসেবে খ্যাত ছিল। প্রতি বছর অনেক পর্যটক পাকিস্তানে যান ফয়সাল মসজিদকে কাছ থেকে এক নজর দেখার জন্য।

ক্রেমলিনের কোল শরিফ মসজিদ, রাশিয়া

এই মসজিদটি দেখে কেউ ভাবতে পারবে না এর অবস্থান রাশিয়ায়। এমনকি রাশিয়াতে এত বেশি পরিমান মুসলমান বাস ক্রএন, এটাও অনেকের অজানা। ক্রেমলিনের এই মসজিদ শুধু রাশিয়া নয়, সমগ্র ইউরোপের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে ৬০০০ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারে। এই মসজিদ নির্মান এর পেছনে আছে এক রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। ষোড়শ শতাব্দিতে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। এই কারনে ১৫৫২ সালে মসজিদে দায়িত্বরত কোল শরিফ এবং তার বহু সংখ্যক ছাত্র নিহত হয় রাশিয়ান বাহিনীর আক্রমণে। তারা মসজিদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি করে। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে এটিকে পুনরায় তৈরি করা হয়। উপর থেকে দেখতে এই মসজিদকে মনে হয় বুঝি এক স্বর্গীয় উদ্যান!

ক্রিস্টাল মসজিদ মালয়শিয়া

এই মসজিদটি মালায়শিয়াতে অবস্থিত, এর কাঠামো স্টিল, গ্লাস ও ক্রিস্টালে তৈরি। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি মালয়শিয়ার ওয়ান ম্যান দ্বীপের ইস্লামিক হেরিটেজ পার্ক-এ তৈরি করা হয়। এখানে প্রায় ২ হাজার মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি ২০০৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি সবার জন্য খুলে দেয়া হয়।

সুলতান আহমেদ মসজিদ, তুরস্ক

সুলতান আহমেদ মসজিদ ইস্তানবুলের একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মসজিদের অভ্যন্তরের দেয়াল নীল রঙের টাইলস দিয়ে সুসজ্জিত বলে এই মসজিদটি ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ নামে পরিচিত। এটি ১৬০৯ থেকে ১৬১৬ সালের মধ্যে অটোমান সম্রাজ্যের সুলতান আহমেদ বখতি নির্মাণ করেন। মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি মাদরাসা, একটি পান্থনিবাস এবং প্রতিষ্ঠাতার সমাধি অবস্থিত। যদিও বর্তমানে এটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তথাপি এটি ইস্তানবুলের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।

গ্র্যান্ড মসজিদুল দিজনি, মালি

আগ্রিকার ছোট্ট দেশ মালির এই গ্রান্ড মসজিদ শুধুমাত্র সৌন্দর্য নয়, এর নির্মাণ শৈলীর জন্য সারা বিশ্বে বিখ্যাত। এই মসজিদটি সম্পূর্ণ মাটির তৈরি। এটি মূলত ম১২০০ থেকে ১৩৩০ সালের ভিতর তৈরি করা হয়েছিলো। কে বা কারা তৈরি করেছিল এই মসজিদ তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। আরও হতবাক করার মত বিষয় হচ্ছে – মালির স্থানীয় মানুশেরা বাদে এই মসজিদের অস্তিত্বের কথা বাইরের কেউ দীর্ঘদিন জানতে পারেনি। অবশেষে ১৮২৮ সালের দিকে এই মসজিদের খোঁজ পায় মানুষ। ফ্রেঞ্চ অভিযাত্রী রেনে ক্যালি এবার মালির দিজনি এলাকায় ভ্রমনে আসেন, তিনি এই অনিন্দ্যসুন্দর মসজিদটি দেখতে পান এবং তার ভ্রমন খাতায় এই মসজিদ সম্পর্কে লিখেন। তিনি বলেন যে মসজিদটি অনেকদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। ফলে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তী ১৯০৭ সালে মসজিদের সংসকার করা হয়। ১৯৮৮ সালে এটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে।

আল মসজিদুল হারাম, সৌদি আরব

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও প্রধান মসজিদ হচ্ছে মসজিদুল হারাম। ৬৩৮ সালে স্হাপিত মসজিদটি সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্হিত। মসজিদটি পবিত্র ক্কাবা ঘরের চারিদিক বেষ্টিত। ৮৮.২ একর আয়তনবিশিষ্ট মসজিদটির লোক ধারন ক্ষমতা প্রায় বিশ লাখ। এখানে সর্বমোট ৯টি মিনার রয়েছে। ক্কাবা ঘরের দিকে নির্দেশনা করেই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নামাজ আদায় করা হয়। ২০০৭ সালে বাদশা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ মসজিদের আয়তন বাড়ানোর কাজ শুরু করেছেন যা ২০২০ সালে শেষ হবে।

শেখ যায়েদ মসজিদ, আবু-ধাবি, আরব আমিরাত

এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে অবস্থিত। এখানে একসাথে ৪০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। এখানে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে। মসজিদের চার কোনায় চারটি মিনার আছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাইয়ান এই মসজিদ নির্মাণে উদ্দোগ নেন। মসজিদটিতে ৮২ টা ডোম, ১০০০ অধিক কলাম ও ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে বানানো ঝাড়বাতি রয়েছে। এছাড়াও পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হাতে তৈরি কার্পেট দিয়ে সাজানো হয়েছে মসজিদটি। চারপাশে পানির পুল দিয়ে ঘেরা হয়েছে যা মসজিদটির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ।

মসজিদ আল নববী (সৌদি আরব)

মসজিদ আল নববীকে অনেকেই চেনেন রাসূলের মসজিদ নামে। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাই এটা মুসলিমদের জন্য দ্বিতীয় পবিত্র স্থান। এই মসজিদের সবুজ ডোমটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। কারণ এখানেই শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে সমাহিত করা হয়েছে। ১৮৩৭ সালে প্রথম এই গুম্বজটিতে সবুজ রং ব্যবহার করা হয়।

সুলতান ওমর আলী সাইফুদ্দিন মসজিদ (ব্রুনাই)

ওমর আলী সাইফুদ্দিন নিঃসন্দেহে বিশ্বয়ের সবচেয়ে সুন্দর মসজিদ। এই মসজিদটি ব্রুনাইয়ের রাজকীয় মসজিদ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এই মসজিদের অপরূপ নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবেন। ১৯৫৮ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। প্রাচীন রাজকীয় ঐতিহ্যের সাথে আধুনিকতার ছোঁয়ায় দারুণভাবে সাজানো হয়েছে মসজিদটিকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here