আতিকুর রাহিম: ঈদ-উল-ফিতরকে কেন্দ্র করে দোকান, গোডাউনে কোটি কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা। কিন্তু মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) মার্কেটটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সব হারিয়ে কোটিপতি ব্যবসায়ীরা এখন নিঃস্ব। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি বলে তাদের মাথায় ঋণের বোঝাও বড় অঙ্কের।স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সামর্থ্যবান মানবিক মানুষ ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা। সেই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিনোদন ও ক্রিড়াঙ্গনের তারকারাও।সেই তালিকায় সবার আগের নামটা তাহসান খানের। বুধবার লাখ টাকার বিনিময়ে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া একটি লুঙ্গি কিনেছেন দেশের এই জনপ্রিয় সংগীত তারকা ও অভিনেতা। পরবর্তীতে শবনম বুবলী এবং বিদ্যা সিনহা সাহা মিমও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। বৃহস্পতিবার একে একে সেই তালিকায় যোগ দিলেন জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, সাবিলা নূর, নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খান।১০০ কাপড়ের দামে মিম একটি জামা কেনার পর ফেসবুকে দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ জানায়, “চিত্রনায়িকা মিম আগুনে ঝলসে যাওয়া জামা কিনে নিয়েছে ১০০ কাপড়ের দামে। জামাটি স্পর্শ করলেন যত্ন নিয়ে, অনুভব করতে চেয়েছেন আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বঙ্গবাজারের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষদের। এরপর চেক লিখে হস্তান্তর করেন বিদ্যানন্দের স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে।”বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুবলী বলেন, “বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া কিছু কাপড় আজ কিনে নিলাম বিদ্যানন্দ – Bidyanondo কাছ থেকে। যে টাকা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত বিক্রেতাদের কাছে। সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে কিছু পুড়ে যাওয়া কাপড় কিনে হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে।”বৃহস্পতিবার বিদ্যান্দের কাছ থেকে একটি পোড়া জিন্স কিনেছেন অপূর্ব। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে এ অভিনেতা বলেন, “বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আসলে আমরা সবাই মর্মাহত। সামনেই ঈদ, এমন মুহূর্তে এটা আসলে মেনে নেওয়াও কঠিন তাদের জন্য। ঈদ মানে তো আনন্দ আর এই আনন্দের দিনে কারও যেন মন খারাপ না হয়, সেজন্য ক্ষুদ্র একটা অর্থায়নের মাধ্যমে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।”অন্যদিকে, বিদ্যানন্দের কাছ থেকে একই দিনে সাবিলা নূর নিয়েছেন একটি শাড়ি। সামর্থ্যবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, “আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আপনারাও করুন। আপনার, আমার সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে।”এদিকে, চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারও বিদ্যানন্দের কাছ থেকে বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্থ পোশাক কিনেছেন। ফেসবুকে সেই ছবি প্রকাশ করে এ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বলেন, “একটি কাপড় কিনে আপনি বঙ্গবাজারের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন। বিদ্যানন্দকে ধন্যবাদ।”দরিদ্র, অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে প্রায়ই দেখা যায় ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা জায়েদ খানকে। এবার রাজধানীর বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে থাকবেন বলে ঘোষণা দিলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দুইবারের সাবেক এ সাধারণ সম্পাদক।এ অভিনেতা তার ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘বঙ্গবাজারে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছি আমি। আপনার যতটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে পাশে থাকুন।’ তিনি আরও লেখেন, ‘এবারের আমাদের ঈদের খরচগুলো বাঁচিয়ে না হয় এইসব সর্বস্ব হারা মানুষগুলোর সঙ্গে ঈদ উদযাপন করি। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।’এদিকে বিনোদন জগতের তারাকাদের পাশাপাশি ক্রিড়াঙ্গনের তারাকারাও এগিয়ে আসছে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায়। সাকিব ও তাসকিনের পর এবার মুশকিক যুক্ত হয়েছেন সেই তালিকায়।
ফেসবুক পোস্টে মুশফিক লেখেন, ‘আসসালামুয়ালাইকুম, সবাইকে রমজান মোবারক। আমি নিশ্চিত এতক্ষণে আপনারা সবাই বঙ্গবাজারের মর্মান্তিক ঘটনার কথা শুনেছেন। বিশেষ করে এটি রমজান মাসে হওয়ায় তারা খুব কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। মুশফিকুর রহিম ফাউন্ডেশন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আছে। এ ইফতারের আয়োজনটি সমন্বয় করবে মাস্তুল ফাউন্ডেশন।’মুশফিক আরও যোগ করেন, “এই রমজান মাসে যতটা সম্ভব এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমাদের ভাইবোনদের সাহায্য করার জন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।”উল্লেখ্য, মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজারে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া কাপড়গুলো প্রথমে কিনে নিচ্ছে দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ। পরবর্তীতে সেগুলোই সংস্কার করে সামর্থ্যবান মানুষ ও তারকাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ বঙ্গবাজারের অসহায় দোকানিদের দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তারা। ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সাহায্যকারী দল, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ও নৌ-বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।এই অগ্নিকাণ্ডে ১২ হাজারের বেশি দোকান পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এসব দোকানে কাজ করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ।