শীতকালে বিভিন্ন প্রকার সমস্যার পাশাপাশি পালা দিয়ে নারী-পুরুষ উভয়েরই পায়ের গোঁড়ালি ফাটা নিয়ে বাড়তি ঝামেলায় পড়েন। অনেকেরই গোঁড়ালি ফাটা পায়ে জ্বালা-পোঁড়া বা যন্ত্রনা হয়ে থাকে। এমনকি তাঁর পায়ের সৌন্দর্য্যও নষ্ট হয়ে যায়। শীতকালে পায়ের গোঁড়ালি ফাটার কারণ জানুন ও প্রতিরোধের জন্য নিম্নক্তো টিপস্ গুলো অনুসরণ করতে পারলেই এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
শীতকালে পা ফাটার কারণ?
আমাদের পায়ের গোঁড়ালি বিভিন্ন কারণে ফেটে যেতে পারে তবে শুধুমাত্র শীতকালেই নয়। আপানার পায়ের গোঁড়ালি যেসব কারণে ফেটে যেতে পারে তার কারণ সমূহ হলোঃ
ক) পায়ের গোঁড়ালি প্রাকৃতিকগতভাবে শুষ্ক হলে, এই শুষ্কতাই আপনার পা ফাটার অন্যতম কারণ এবং যাতে পা ফেটে না যায় তার জন্য পায়ের গোঁড়ালি আর্দ্র রাখা।
খ) আপনার অতিরিক্ত শারীরিক ওজনই পা ফাটার অন্যতম কারণ। এই অতিরিক্ত ওজন, স্বাভাবিক ওজনের চেয়ে পায়ের গোঁড়ালির উপর বেশি চাপ বহন করতে হয়। এ কারণেও আপনার পায়ের গোঁড়ালি ফেটে যেতে পারে।
গ) আপনি যদি ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড সমস্যার ভুক্তভুগি হন তাহলেও আপনার পায়ের গোঁড়ালি ফেটে যেতে পারে।
ঘ) বয়স বৃদ্ধির কারণেও আপনার পায়ের গোঁড়ালি ফেটে যেতে পারে।
ঙ) কোন শক্ত স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকলেও আপনার পায়ের গোঁড়ালি ফেটে যেতে পারে।
পা ফাটা দূর করতে সমাধান!
অনেকেই নানান ধরনের ক্রিম ব্যবহার করে থাকেন এই পা ফাটা দূর করতে। কিন্তু কেমিকেল সমৃদ্ধ ক্রিমে প্রাথমিক ভাবে কিছুটা ঠিক হলেও পরবর্তীতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সহ সমস্যা শুরু হয় আবার। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পা ফাটা রোধের কিছু উপায়।
(ক) গ্লিসারিন ও গোলাপ জলের ফুট মাস্ক
পায়ের গোড়ালি ফাটা যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে আপনি অনায়েসে এটি ফুট মাস্ক ব্যবহার করে দূর করতে পারেন।
পদ্ধতিঃ ফুট মাস্কের জন্য আপনার লাগবে লবন, লেবুর রস, গ্লিসারিন, গোলাপ জল ও কুসুম গরম পানি। একটি বড় পাত্রে ২ লিটার কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে ১ চা চামচ লবন, ১ টি গোটা লেবুর রস, ১ কাপ গোলাপ জল দিয়ে এতে পা ভিজিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। এরপর একটি মাজুনি কিংবা পেডিকিউরের পিউমিস স্টোন বা ঝামা ইট দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালো করে ঘষে শক্ত, মোটা ও মরা চামড়া তুলে পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ১ চা চামচ লেবুর রস, ১ চা চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে পায়ে লাগান। এভাবে রেখে দিন পুরো রাত। একটু চিটচিটে লাগতে পারে। কিন্তু আপনাকে সহ্য করে নিতে হবে। সকালে উঠে কুসুম গরম পানি দিয়ে পা ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যাবহারে ১০-১৫ দিনের মধ্যেই পা ফাটা গায়েব হয়ে যাবে।
(খ) নারকেল ও কলার ফুট মাস্ক
যদি পা ফাটা একটু বেশী খারাপ পর্যায়ে চলে যায় তবে এই ফুট মাস্কটি আজকে থেকেই প্রতিদিন ব্যাবহার করার চেষ্টা করুন। খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।
পদ্ধতিঃ একটি কলা টুকরো করে নিন। এরপর তাজা ৩/৪ খণ্ড নারকেল নিন। দুটিতে একসাথে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর এই মিশ্রণটি পায়ে লাগিয়ে নিন। বিশেষ করে ফাটা স্থানে ভালো করে লাগাবেন। শুকিয়ে উঠলে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি হাতের কাছে তাজা নারকেল না পান তবে একটি কলা পিষে নিয়ে এতে ২/৩ চা চামচ নারকেল তেল দিয়ে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে লাগাতে পারেন।
(গ) প্রাকৃতিক স্ক্রাব ও তেল
পা ফাটা রোধের সব থেকে ভালো উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক স্ক্রাবের ব্যাবহার। ঘরোয়া ভাবে তৈরি এই স্ক্রাবটি প্রতিদিন ব্যাবহার করে খুব দ্রুত পা ফাটা রোধ করতে পারবেন। পদ্ধতিঃ স্ক্রাবটি তৈরি করতে আপনার লাগবে ২/৩ চা চামচ চাল, সাদা ভিনেগার ও মধু। প্রথমে চাল একটু ভিজিয়ে রেখে পিষে নিন। ব্লেন্ডারে দিয়ে অথবা শিল পাটায় বেটে নিতে পারেন। একটু দানা দানা করে চাল পিষে নেবেন। এরপর এতে পরিমাণ মত ভিনেগার ও মধু দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। একটি বড় পাত্রে কুসুম গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট পা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর ভেজা পায়ে ঘন পেস্টটি ভালো করে ম্যাসাজ করুন। ম্যাসাজ করে পা সেভাবেই রেখে দিন ১০ মিনিট। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ভালো করে মুছে নিন। তারপর খানিকটা অলিভ অয়েল গরম করে নিয়ে পায়ে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাবেন।