এস.এ.এম সুমন:- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি` এই একটি গানই শহীদ আলতাফ মাহমুদকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী সুর সংযোজন করে তিনি খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে মিশে আছেন তিনি। সংগীত হয়ে উঠেছিল যার যুদ্ধাস্ত্র আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
গানের সুরকার হিসেবে কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন আলতাফ মাহমুদ। আর এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। পাকিস্তানি হানাদারদের টার্গেটে পরিণত হন তিনি। একাত্তরের ৩০ আগস্ট তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আজ অবধি তিনি ফিরে আসেননি।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এ গানের কথা ও সুরের মধ্যেও রোপিত ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজমন্ত্র। যা মানুষের ভেতরে এ অন্য রকম স্পন্দন তৈরি করেছে। আর আজও করছে। এ বীজমন্ত্র রোপণকারী সুরস্রষ্টা হলেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ।
আলতাফ মাহমুদের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদীতে পাতারচর গ্রামে। বাবা নাজেম আলী হাওলাদার এবং মা কদবানুর একমাত্র পুত্রসন্তান ছিলেন তিনি । গ্রাম থেকে আসা সেই ছেলেটি ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি এ সময়ে গণসংগীত ছাড়াও নৃত্যনাট্য ‘রাজপথ জনপথ’, ‘জ্বলছে আগুন ক্ষেতখামারে’, হাজার তারের বীণার সংগীত পরিচালনা করেছেন।
আলতাফ মাহমুদ ১৯৬৪ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত উর্দু ও বাংলা মিলে বহু চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন। চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে- তানহা, ক্যায়সেকহু, কারবউ, রহিমবাদশাওরূপবান, বেহুলা, আগুন নিয়ে খেলা, দুইভাই, সংসার, আঁকাবাকা, আদর্শ ছাপাখানা, নয়নতারা, শপথ নিলাম, প্রতিশোধ, কখগঘঙ, মিশরকুমারী, কুচবরণকন্যা, সুয়োরানী-দুয়োরানী, আপনদুলার, সপ্তডিঙ্গা, এই নিয়ে পৃথিবী ইত্যাদি। এসব চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা ছাড়া আঁকাবাকা, বেহুলা, কখগঘঙ, কুচবরণকন্যা, সুয়োরানী দুয়োরানীতে কণ্ঠও দেন এবং আঁকাবাকা ও কখগঘঙ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করেন তিনি ।
আবার ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে ঢাকা শহরের গেরিলা অপারেশনে সক্রিয় অংশ নেন। ক্র্যাক প্লাটুনেরও তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় যোদ্ধা। স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান তৈরি করে গোপনে তা মুক্তাঞ্চলেও পাঠাতেন।
শিক্ষাজীবন শুরু বরিশাল জেলা স্কুলে । ছেলেবেলায় গান গাওয়ার পাশাপাশি ছবি আঁকার প্রতিও ঝোঁক ছিল। গান গাওয়া এবং ছবি আঁকায় ছিলেন স্কুলের সেরা। ১৯৪৮ সালে কলকাতা বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিক পাস করেন। কলকাতা আর্ট কলেজে কিছুদিন পড়াশোনা করেন।
১৯৬৬ সালের ১৬ অক্টোবর সংস্কৃতিমনা বিল্লাহ পরিবারের বড় মেয়ে সারা আরা, ডাকনাম ঝিনুর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়ের মধ্যস্থতায় বেগম সুফিয়া কামালও জড়িত ছিলেন। বিয়ের পর দুজনের দাম্পত্যজীবনের পরিধি ছিল মাত্র পাঁচ বছর। এই সময় তাদের ঘরে জন্ম নেয় একমাত্র মেয়ে শাওন।