ইকরামুল হাসান শাকিল:-
প্রকৃতির খুব কাছে যাওয়ার জন্য জঙ্গল ট্রেকিং হল সব থেকে সহজ উপায়। এখানে প্রকৃতির প্রকৃত সৌন্দর্য অনুভব করা এবং চেনা-অচেনা ও বিরল উদ্ভিদ, প্রাণীর মধ্যে বিস্ময়কর জীবনযাপন দেখার সুযোগ মেলে। জঙ্গল ট্রেকিং একটি খুব রোমাঞ্চকর এবং সাহসিক অভিজ্ঞতা। সবুজ বন ঘিরে যে রহস্য আছে তা কাছ থেকে দেখা যায়। আর তরুণ-তরুণীরা সেই রহস্যে কৌতূহলী হয়ে বেড়িয়ে পরে ঘর থেকে ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে। তবে আগের থেকে এখন এই জঙ্গল ট্রেকিং তরুণ-তরুণীদের মাঝে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ছুটে যাচ্ছে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা জঙ্গল, জাতীয় উদ্যানগুলোতে।
তেমনি আমরা একদল বাউন্ডুলে ঢাকার যান্ত্রিক কোলাহল থেকে একটু রেহায় পেতে ঘর ছেড়েছি। উদ্দেশ্য হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক উদ্যান। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও সংশোধন আইনের বলে ২৪৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে “সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান” প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উদ্যানে সাতটি পাহাড়ি ছড়া আছে, সেই থেকে এর নামকরণ সাতছড়ি । সাতছড়ির আগের নাম ছিলো “রঘুনন্দন হিল রিজার্ভ ফরেস্ট”। আমাদের যাত্রা শুরু ঢাকা থেকে সকাল সাতটায়। সকালের খাবার প্যাকেট করে সাথে নিয়েছি। পথে কোথাও দাঁড়িয়ে খেয়ে নেব। সকাল দশটায় আমরা পৌঁছালাম নরসিংদীর আব্দুল কাদের মোল্লা সিটি কলেজ। এখানেই আমাদের সাকলের নাস্তা খেয়ে নিলাম। খাবার শেষে আবার ছুটে চললো আমাদের গাড়ি। বারোটা বাজতে এখনো বেশ দেরি। আমরা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চলে এলাম।
এখান থেকে একজন গাইড নিয়ে উদ্যানের টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকে গেলাম। আকাশ স্পর্শ করা গাছের পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে সূর্যের আলো এসে এক দারুণ শিল্পকর্ম সৃষ্টি করেছে। ঘনসবুজের শীতলতা ও পাখিদের মিষ্টিসুরের অভ্যর্থনা আমাদের শহরের যান্ত্রিক ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর করে দিলো। আমরা সারিবদ্ধভাবে বনের ভিতর দিয়ে হেঁটে চলছি আর প্রকৃতির রূপ প্রাণভরে দেখছি। পায়ে নিচে ঝরে পরা শুকনো পাতার মড়-মড় শব্দ, পাখিদের কিচিরমিচির ও বাতাসের নরম শব্দে আমাদের সকল অবস্বাদ ভুলিয়ে দিলো। আমরা শুধু নিঃশব্দে গভীর সবুজের কোরাস ফুসফুসে ভরছি যে যেভাবে পারছি।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে রয়েছে ১৯৭ প্রজাতির জীব। এই উদ্যানে কাউ ধনেশ, পাতি ময়না, মেটে কাঁড়িচাচা, তুর্কী বাজ, সবুজ ঘুঘু, চিত্রা হুতুম প্যাঁচা, তামাটে বেনেবউ, সিঁদুরে সাহেলী সহ প্রায় ২০৩ প্রজাতির পাখি আছে। উল্লুক, মুখপোড়া হনুমান, চশমাপড়া হনুমান, কুলু বানর, কাঠবিড়ালী, খরগোশ, বন বিড়াল, মায়া হরিণসহ ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী। বিরল প্রজাতির উড়ন্ত টিকটিকি, নীলগলা গিরগিটি, তক্ষক ও বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ ৫০ প্রজাতির সরিসৃপ এবং বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ সহ প্রায় ২১ প্রজাতির উভচরপ্রাণী রয়েছে এই বনে। এখানে বিরল প্রজাতি বেলফুই গাছের মতো অনেক বিরল গাছসহ প্রায় ১৪৫ প্রজাতির গাছপালা রয়েছে।
ঘনসবুজের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আমরা চা বাগানের ভিতর দিয়ে হাঁটছি। উদ্দেশ্য সাতছড়ি চা বাগান ডাকবাংলো। প্রায় আড়াই ঘন্টা ট্রেকিং শেষে আমরা ডাকবাংলোতে এসে পৌঁছালাম। এখানেই আমাদের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খাবার শেষে আবার ফিরতি পথেই পা বাড়ালাম। এভাবেই প্রকৃতির প্রকৃত সৌন্দর্য অনুভব করে এবং চেনা-অচেনা ও বিরল উদ্ভিদ, প্রাণীর মধ্যে বিস্ময়কর জীবনযাপন দেখে এবং জঙ্গল ট্রেকিং এর রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম।