চলচ্চিত্রের সুদিন ফেরাতে সম্ভাবনা ও তার প্রতিকার

0
1473

আশরাফুল ইসলাম আকাশ: দেশে অনেক প্রতিভাবান পরিচালক আজ অবহেলার পাত্র হয়ে গেছেন। কথাগুলো বলার কোনো ইচ্ছার আমার ছিলো না। ছবির মান দেখলেই বোঝা যায় যে কিছু নামিদামি পরিচালকদের কাজের খবর। একের পর এক বড় বাজেটের সিনেমা তৈরী হচ্ছে অথচ হলে দর্শক খরা। দর্শকের মনে কোনো তৃপ্তি নেই।

সিনেমা তৈরী হচ্ছে দর্শক অবশ্যই দেখবে যদি সামাজিকতা থাকে। যেমন বলা যায়, সেই সাদাকালো যুগে নির্মিত জানা অজানা সেই বিখ্যাত ছায়াছবি গুলো ওরা ১১ জন, ভাত দে, সূর্য দীঘল বাড়ি, সাড়েন বৌ আবার একুশ দশকে মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমাগুলো আয়নাবাজি, দহন, দেবী, ফাগুন হাওয়া, (আরো বেশ কিছু রয়েছে) এই ছবিগুলো দর্শকদের কাছে রীতিমতো প্রশংসিত। এ ধরনের সিনেমাগুলো পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হলে গিয়ে উপভোগ করার মতো। বাকি যে সিনেমাগুলো আছে সেগুলোর খোজ নিলে বোঝা যাবে সিনেমার নামে চলছে বেহায়াপনা!

শোনা যাচ্ছে দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা বেশি ভালো নয়। এর কারন কি? ভালো মানের শিল্পীর অভাব নাকি কলাকুশলীদের নাকি সিনেমা তৈরীর কারিগরদের। একটি সুন্দর গল্প ও তার সঠিক পরিচালনায় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে। বিগত ২ বছরের কথা যদি চিন্তা করে বলা যায়, হাতে গোনা গুটি কয়েক ব্যবসা সফল সিনেমা ছাড়া আর কোনো চোখে পড়ার মতো কাজ নেই।

চলচ্চিত্র শিল্পীদেরকে দেশের মানুষ অনুকরণ ও অনুসরণ করে। তাদের অভিনীত কোনো কাজ যদি দর্শকের মনে ধরে ব্যস তাহলে পেছনে ঘুড়ে তাকানোর সময় কোথায়। কিন্তু এর জন্য প্র‍য়োজন গল্প আর পরিচালনা। উনিশ শতকের প্রতিটা শিপ্লীরা গুনে মানে ছিলো অনন্য। তারা কাজের প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তারা অর্থকে প্রাধান্য না দিয়ে কাজকে বড় করে দেখেছেন। কিন্তু আবার বর্তমান শিল্পীরাই নির্মাতাদের রীতিমতো খবরদারি করেন। দেশের কিছু স্বনামধন্য অভিনেতা-অভিনেত্রী ব্যতীত বাকি সবার অবস্থা শোচনীয়। নায়ক রাজ রাজ্জাক, সালমান শাহ, জসীম, আলমগীর, সুচন্দা, কবরী, ববিতা, শাবানা, মৌসুমি, শাবনূর তাদের কাজের মান কোথায় আর আজকের শিল্পীদের কী অবস্থা। এ বেহাল দশার জন্য দায়ী কে?

লোক চক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন এমন কিছু পরিচালকের কথাও বলা যেতে পারে। তাদের হাতে সুন্দর গল্প, পূর্ব কাজের সফল অভিজ্ঞতা ও সামাজিকতা সবই বিদ্যমান। কিন্তু আজ তারা কেন কাজে যেতে পারছে না ভাববার বিষয়। ভালো সিনেমা তৈরীতে কেন এত অবহেলা। কত রঙিন পোস্টার ছেয়ে গেছে দেশের প্রতিটা দেয়ালে, এ থেকে রেহাই পায়নি বিলবোর্ডও, ঐ সেই ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বেশ কিছু নামই ঘোরপাক খায় চোখের সামনে।

দুই বাংলার সম্মিলিত কাজ নিয়ে যে তালবাহানা চলছে। আসলে যৌথ প্রযোজনার নামে চলছে যৌথ প্রতারণা। এতে কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কোনো সুফল বয়ে আসেনি। দুই বাংলাকে পুজি করে পয়সা হাতিয়ে নিয়েছেন বেশ কিছু সংখ্যক গণ্যমান্যরা। পুরোনো শিল্পীদের হাতে এখন মাইক্রোফোন দিলে তারা কান্নার স্বরে কথা বলেন। অন্যদের কাজ দেখে বাহ বাহ জানানো ছাড়া আর কোনো কাজ রয়েছে কি? এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ইন্ডাস্ট্রির ধ্বংস অনিবার্য। গুনী শিল্পীরা কাজ করছেন না প্রশ্নটি করলেই সরাসরি বলেতে বাধ্য হন ‘ভালো গল্প নেই তাই কাজ করছি না’।

চলচ্চিত্র প্রযোজকদের ভূমিকা ইন্ডাস্ট্রিতে অসামান্য। তারা যেন চিন্তাভাবনা না করেই কাজগুলোতে হাত দেয়, পরিশেষে কাজের ফলাফল হতাশায় রূপ নেয়। তারা ভীর জমাচ্ছেন সেসব মানুষের কাছে যারা সিনেমার নামে অবুঝ খেলায় মেতে উঠেছে। অশ্লীলতায় ভরপুর সিনেমাগুলোকে পুজি করে হলে দর্শক ভেড়ানো সম্ভব নয়। দেশের মানুষ সচেতন তারা ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে। সামান্য কিছু সংখ্যক প্রযোজকরা একটি চিন্তা শক্তিতে আবদ্ধ হয়ে গেছেন। সেখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেড়িয়ে আসতে হবে। সিনেমা ব্যবসা সফল করতে প্রযোজকদের ভূমিকা অত্যন্ত জরুরি।

আরো একটি কথা বলা যায়, দেশের সাধারন মানুষেরা আজ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ভুলে পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে দিন দিন ঝুকে পড়ছে। স্টার জলসা একটি ব্যধির নাম। একটি ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে আজ দর্শক নানান রোগে ভুগছে। অসামাজিকতা ও অশ্লীলতাকে হার মানাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এটি শুধু মাত্র হয়েছে দেশে গল্পনির্ভর ও ভালো মানের কোন কাজ না থাকার কারনে। শুনেছি আশি ও নব্বই দশকে বিটিভিতে প্রচারিত হওয়া ধারাবাহিক গুলোর জন্য রাজপথে মিছিল হতো। কোথাও কেউ নেই, আজ রবিবার, সংসপ্তক, ঢাকাই থাকি ইত্যাদি। আজ কেনো তা হচ্ছে না। বিষয়টি গভীর ভাবে চিন্তা করলেই বোঝা যায় দর্শক এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। দেশের টিভি চ্যানেল পূর্বের তুলনায় আজ অনেক উন্নত কিন্তু কাজ দেখে ততটা তৃপ্তি মেলে না। সিনেমা হল বা টিভি চ্যানেল যা বলেন সব ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনে ভরপুর।

পরিচালক তো উনারও ছিলেন সত্যজিৎ রায়, জহির রায়হান, হুমায়ূন আহমেদ, আমজাদ হোসেন ইত্যাদি ইত্যাদি। স্যালুট প্রয়াত লিজেন্ড দের। ভালো থাকবেন ওপারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here