২৮ বছরের ও বেশি সময় ধরে জনপ্রিয় জয়া আহসান

0
1473

এস.এ.এম সুমন:- জয়া আহসান টিভি নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। ২০০৩ সালে তার প্রথম ছবি ‘ব্যাচেলর’ মুক্তির পর থেকেই চলচ্চিত্রে কাজ করার অফার পেতে শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি বেশ কয়েকটি ছবিতে কাজ করেছেন। প্রায় একই সময়ে টলিউডে মুক্তি পায় সেখানে তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘আবর্ত’।

অভিনয় শুরুর আগে জয়া নাচ ও গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ওপর ডিপ্লোমা করেছিলেন এবং আধুনিক সঙ্গীতের ওপর প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। তিনি একটি সংগীত স্কুলও পরিচালনা করেন। মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা জয়া আহসান অভিনীত গেরিলা ছবিটি ছিলো দেখার মতো। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত সৈয়দ শামসুল হক-এর ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস অবলম্বনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত গেরিলা চলচ্চিত্রে জয়া বিলকিস বানু চরিত্রে অভিনয় করে ২০১১ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী হিসেবে খেতাব লাভ করেন।

তার অভিনীত আরো কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্র এর মধ্যে একটি হলো ‘ডুবসাঁতার’ ২০১০ সালের ১৭ নভেম্বর ঈদুল আযহায় মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ৯২ মিনিট দৈর্ঘ্যের ডিজিটাল ফরম্যাটে নির্মিত এই ছবিটির কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন নূরুল আলম আতিক। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, শেহজাদ চৌধুরী, অমোক ব্যাপরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শাহরিয়ার শুভ, বোংশু হোর, শ্রাবন্তী দত্ত তিন্নি, স্বাধীস খসরু, সুষমা সরকার, স্বাগতাসহ আরও অনেকে।।

জয়া আহসানের অভিনীত আরো একটি জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হলো ‘চোরাবালি’। এটি ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। ছবিটি পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় টিভি নির্মাতা রেদওয়ান রনি। সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার এ্যাকশান ও থ্রিলারনির্ভর একটি গল্প নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ছবিটি। ছবিটির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতের সেরা অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী জয়া আহসান। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সোহেল রানা, এটিএম শামসুজ্জামান, শহীদুজ্জামান সেলিম, হিল্লোল, সালেহীন স্বপন, পিয়া, ইরেশ যাকের, সাধু সজীব এবং একটি আইটেম গানে নেচেছেন সিন্ডি রোলিং। চলচ্চিত্রে এটি তাঁর দ্বিতীয় অংশগ্রহণ প্রথমবার কমন জেন্ডার-দ্য ফিল্ম -এ।চলচ্চিত্রটি প্রথমে বাংলাদেশে এবং পরে ইউরোপ, এশিয়ার কয়েকটি দেশ সহ বিশ্বের প্রায় ১০টি দেশে মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

‘এনেছি সূর্যের হাসি’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয়ের পর জয়া জাতিসংঘের নারী ও শিশু সহায়তা বিভাগের শুভেচ্ছা দূত হন। এছাড়াও তিনি মেরিল প্রথম আলো এ্যাওয়ার্ড, ১৭ তম কলকাতা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড, ১১ তম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

তার অভিনীত ধারাবাহিক ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘দরজার ওপাশে’, ‘লাবণ্য প্রভা’, ‘মনে মনে’ , ‘নীড়’ , ‘পলায়ন পর্ব’, ‘৬৯’ , ‘সংশয়’ এবং ‘এক পর্বের আমেরিকানা’, ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ , ‘তেভাগা’ , ‘অফ বীট’, তারপরেও ‘আঙুরলতা নন্দকে ভালবাসে’ এই নাটক গুলো সত্যি উপভোগ্য।

১৯৯০ থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৮ বছরের ও বেশি সময় ধরে অসাধারণ অভিনয় ও মডেলিং এর মাধ্যমে লাখো ভক্তের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হয়েছেন জয়া । এখন পর্যন্ত তার কোন স্ক্যান্ডাল নেই। এখনকার মডেল আর অভিনেত্রীদের দেখলে হাসি আসে। জনপ্রিয় হয়ে উঠার আগেই স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যায়।

জয়া আহসান বাংলাদেশ একটি জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী. তিনি দেরী ৯০ এর মধ্যে বিনোদন ব্যাবসায় তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং সে কি এখনও পরিবারকে চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকে একটি নেতৃস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে কাজ করছে। যে তার একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য একটি নেতৃস্থানীয় অভিনেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা বজায় রাখায় আধুনিক যুগের বাংলাদেশে শুধুমাত্র অভিনেত্রী। তাছাড়া, তিনি একটি গ্ল্যামার মডেল হিসেবে TVC তে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন। তিনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

জয়া আহসানের ফিল্মে আত্মপ্রকাশ ঘটে মোস্তফা সারওয়ার ফারুকীর নির্মিত (২০০৩) ‘ব্যাচেলর’ দ্বারা। ফিল্ম জগত তার স্বপ্ন সারথী হলে দেশব্যাপী সারা জাগাতে পারেননি এই অভিনেত্রী এর পরে তিনি সাত বছর ধরে রূপালী পর্দা থেকে অনুপস্থিত ছিল। পরবর্তীতে তিনি ফিরে নূরুল আলম আতিক এর নির্মিত সিনেমা “ডুবসাতার” (২০১০) সালে আবারও রূপালী পর্দায় হাজির হন। যে ছবিতে জয়া আহসান ট্র্যাক “যদিও খোলা হাওয়া”র সঙ্গে, নেপথ্য গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছরে তিনি “ফিরে এসো বেহুলা” এ অভিনয় করেন। এটা তার কর্মজীবনের প্রথম বড় বাজেটের ফিল্ম ছিল। ছবিটি বক্স অফিসে রীতিমতো কড়া নাড়ে।

জয়া আহসান চলচ্চিত্রাঙ্গনে বেশ পাকাপোক্ত একটা স্থান তৈরী করে ফেলেছেন। এবং দেশসহ দেশের বাহিরে থেকে অর্জন করেছে অসংখ্য এ্যাওয়ার্ড। জয়া আহসান একজন গুনী অভিনেত্রী। তার অভিনয় নৈপূণ্যে সিনেমা প্রেমিকরা তাকে বড় পর্দার একজন সফল অভিনেত্রী হিসেবে চেনে।

অভিনয় জগতে তার সাফল্যগুলো এক নজরে-

র্আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র সমালোচক পুরস্কার 
২০১২ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী গেরিলা (২০১১) বিজয়ী

আন্তর্জাতিক বাংলা চলচ্চিত্র পুরস্কার (আইবিএফএ)
২০১৭ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিসর্জন (২০১৬) বিজয়ী

চ্যানেল আই পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ডস
২০১২ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী গেরিলা (২০১১) বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেত্রী চৈতাপাগল (২০১১) বিজয়ী

চারুনীড়ম পুরস্কার
২০০৯ শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেত্রী অন্তরীক্ষ (২০০৮) বিজয়ী
২০১০ মায়েশা (২০০৯) বিজয়ী
২০১১ মায়া ও মৃত্যুর গল্প (২০১০) বিজয়ী

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
২০১৩ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী গেরিলা (২০১১) বিজয়ী
২০১৪ চোরাবালি (২০১২) বিজয়ী
২০১৭ জিরো ডিগ্রী (২০১৫) বিজয়ী

জি সিনে পুরস্কার
২০১৭ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিসর্জন (২০১৬) বিজয়ী

টেলি সিনে পুরস্কার
২০১৬ শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী রাজকাহিনী (২০১৫) বিজয়ী

ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব
২০১২ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (জুরি পুরস্কার) গেরিলা (২০১১) বিজয়ী

ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, পূর্ব
২০১৪ শ্রেষ্ঠ নবীন অভিনেত্রী আবর্ত (২০১৩) বিজয়ী
২০১৮ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিসর্জন (২০১৭) বিজয়ী

বঙ্গ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার
২০১৮ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিসর্জন (২০১৬) বিজয়ী

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার 
২০১৪ শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী গেরিলা (২০১১) বিজয়ী

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
তারকা জরিপ পুরস্কার
২০১০ তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালবাসে (২০০৯)বিজয়ী
২০১২ চৈতা পাগল (২০১১) বিজয়ী

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী
২০১৩ চোরাবালি (২০১২) বিজয়ী

শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেত্রী
২০১৪ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী (২০১৩)বিজয়ী

সমালোচক পুরস্কার
২০০৭ শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেত্রী হাটকুঁড়া (২০০৬)বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী গেরিলা (২০১১) বিজয়ী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here