আতিকুর রাহিম (বিনোদন ডেস্ক):
ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় নায়ক ও সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ফারুক মারা গেছেন। সোমবার (১৫ মে) স্থানীয় সময় সকাল ১০ টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
জানা যায়, সিঙ্গাপুরের ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন নায়ক ফারুক। উচ্চ রক্তচাপ, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। পুরনো বেশ কিছু শারীরিক জটিলতাও ছিল। সবশেষ ২০২১ সালের ৪ মার্চ নিয়মিত চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুরে যান এই অভিনেতা। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এরপর থেকে দীর্ঘ সময় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
চিত্রনায়ক ফারুক ১৯৪৮ সালের ১৮ই অগাষ্ট পুরোনো ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস গাজীপুরের কালিগঞ্জে। পুরনো ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। তার বাবা ছিলেন চিকিৎসক।
একসময় পাড়া-মহল্লায় নাটক বা কোনও অনুষ্ঠান পন্ড করাই ছিল তাঁর কাজ। ২০ টাকার বিনিময়ে ডিম ছুড়ে ভণ্ডুল করে দিতেন সেসব আয়োজন।
যুদ্ধজাহাজ চালানোর স্বপ্ন দেখতেন ছোটবেলায়, কিন্তু হয়ে গেলেন অভিনেতা। ছাত্রজীবনে পুরোনো ঢাকায় মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ নামের সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় আগমন ঘটে তার। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক।
এরপর তিনি ঢাকাই সিনেমায় অন্যতম একজন ব্যস্ত নায়ক হয়ে যান। গ্রামীণ প্রতিবাদী চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন মিয়া ভাই ফারুক। এ ধরনের চরিত্রে অভিনয়ে নায়ক ফারুকের অবস্থানে এখনও কেউ আসতে পারেনি।
অভিনেতা ফারুক ৭০ এর দশকে ‘লাঠিয়াল’ সিনেমায় লাঠিয়াল চরিত্রে অভিনয় করেছেন, সারেং হয়েছেন ‘সারেং বৌ’ ছবিতে, আবার রোমান্টিক প্রেমিকের চরিত্রে সুজন সেজেছেন ‘সুজন সখী’ সিনেমায়।
ফারুক অভিনীত প্রথম সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন কবরী। এরপর তিনি সূচন্দা, ববিতা এবং রোজিনাসহ অনেকের সাথে বিভিন্ন সময় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। ফারুক কেবল নায়ক চরিত্রে পর্দায়ই জনপ্রিয় ছিলেন না, সহকর্মীদের কাছেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। ইন্ডাস্ট্রিতে সবার কাছে মিয়া ভাই নামে পরিচিত ছিলেন তিনি, সবাই তাকে মিয়া ভাই বলে ডাকতেন। শিল্পের কারও কোন সমস্যা হলেই তিনি সাহায্যে এগিয়ে আসতেন।
অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ২০১৬ সালে ভূষিত হন আজীবন সম্মাননায়।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘সারেং বৌ’, ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘মিয়া ভাই’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘সূর্য গ্রহণ’ ইত্যাদি। পাঁচ দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন বহু দর্শকপ্রিয় চলচ্চিত্রে। ‘মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পর তিনি চলচ্চিত্রাঙ্গনে ‘মিয়া ভাই’ হিসেবে খ্যাতি পান।
অভিনেতা ফারুক ছাত্রজীবনে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। সে সময় মিছিলে অংশ নেয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয়েছিল বলে তার পারিবারের একজন সদস্য জানিয়েছেন।
তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি বড় পর্দায় অভিনয়ে প্রতিষ্ঠা পান। তিনি পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে। অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।