আতিকুর রাহিম (বিনোদন ডেস্ক):
আপনি যদি সৃজনশীল ও দক্ষ ফটোগ্রাফার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য কাজের ক্ষেত্র অবারিত। আপনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া এবং বিস্তর ফটো এজেন্সি। ফটো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়ে এখন অনেকেই খ্যাতি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি আর্থিক সঙ্গতিটা তো রয়েছেই। কেবল সাংবাদিকতাই নয়, আপনি গ্গ্ন্যামার ফটোগ্রাফি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও প্রডাক্ট ফটোগ্রাফি এবং ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও করতে পারেন দেদার। আর বিশ্বের জানালা তো খোলা আছেই আপনার বিছানার পাশে। সারাবিশ্বে অসংখ্য প্রতিযোগিতা হয় ফটোগ্রাফির ওপর। সেসবে অংশগ্রহণ করে বিশ্বব্যাপী একটা খ্যাতিও অর্জন করে নিতে পারেন। সঙ্গে পাওয়া টাকার অঙ্কটাও খারাপ নয়!
শখের বসে ফটোগ্রাফি আর দক্ষ ফটোগ্রাফার দুটি কিন্তু এক নয়। তবে এ দুটির জন্যই প্রয়োজন সৃজনশীলতা। ক্যামেরার ল্যান্সে যে কোনো বিষয় দেখার অন্যরকম একটা ক্ষমতা থাকে ফটোগ্রাফারদের। আলো-ছায়ার খেলায় ফটোগ্রাফার ছোট্ট ও সামান্য বিষয়কেও অর্থবহ এবং অনেক বড় করে তুলতে পারেন। তবে এ পেশায় ধৈর্য আবশ্যক। কাজের ব্যাপারে এখানে যত বেশি আন্তরিক থাকবেন, তত দ্রুত সাফল্য ও সার্থকতা ধরে পকেটে পুরতে পারবেন। তাছাড়া যে কোনো পরিস্থিতিতে পেশাদারিত্বের কথা মাথায় রেখে ছবি তোলার মানসিকতাও পোষণ করতে হবে মনে।
ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসাবে নেওয়া তেমনি এক তরুনী ফারহানা নিশো। একজন পেশাদার ফটোগ্রাফার হিসেবে ইতিমধ্যে যিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি ফটোগ্রাফি করেন। যে কোনো ধরণের অনুষ্ঠানে তিনি ফটোগ্রাফি করে থাকেন তবে বিয়ে, জন্মদিন , কর্পোরেট ইভেন্ট গুলো বেশি করা হয়।
লেখাপড়া শেষে ছোট একটি চাকরি করতেন নিশো। কিন্তু সেটা দিয়ে চলতে সমস্যা হতো তার। তিনি তখন চিন্তা করলেন পাশাপাশি কি করা যায়। অনেক চিন্তা করেও বুঝতেছিলেন না কি করবেন।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে একটি বিদেশি মেয়েকে ফটোগ্রাফি করতে দেখে খুব ভালো লাগলো তার, তখন মনে মনে ঠিক করলেন তিনিও ফটোগ্রাফি করবেন। তখনও তিনি জানতেন না কিভাবে শুরু করবেন। পরিচিত অনেকের সাথেই তিনি কথা বলেন, তার কথা শুনে সবাই বলতে লাগলো ফটোগ্রাফি অনেক কঠিন, তাছাড়া মেয়ে মানুষকে দিয়ে ফটোগ্রাফি হবে না।
কিন্তু ফারহানা নিশো থেমে যাওয়ার পাত্রী নন। চাকরির পাশাপাশি ফটোগ্রাফি করার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকলেন তিনি। অনেক ফেসবুক পেজে নক দিয়েছেন। কিন্তু কেউ শিখাতে চাচ্ছিলো না মেয়ে মানুষ মনে করে।
হঠাৎ ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া ( Independent Media ) নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে কিছুদিন পর তার সাথে যোগাযোগ করা হয়। তখনও তিনি জানতেন না যে তার ফটোগ্রাফার হওয়ার ইচ্ছা এতো তাড়াতাড়ি পূরন হবে। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিডিয়া থেকে ফটোগ্রাফি শেখা শুরু করেন এবং অনেক তাড়াতাড়ি কাজ শেখা শেষ করেন। তারপর চাকরিটা ছেড়ে দেন। এখন শুধু ফটোগ্রাফি করে অনেক ভালো আছেন তিনি।
ফারহানা নিশো বলেন, “প্রথমে একটি ক্যামেরা ও লেন্স কিনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিলো। যদিও ভালো ভাবে কাজ করতে পারলে কাজের অভাব হয়না। এখন অনেক পরিবারের বিয়েতে মেয়ে ফটোগ্রাফার চায়। তাই কাজের সুযোগ মেয়েদের সবসময় থাকে।”
নিশোর মতে, “চাকরির জন্য না ঘুরে এই পেশায় যে কেউ আসতে পারেন, তাহলে বেকার সমস্যা কিছুটা হলেও কম হবে। সব চেয়ে বড় কথা এটি স্বাধীন পেশা। নিজের মতো করে সব কিছু করা যায় গ্রাহকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে।”
এটি অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং পেশা, এখানে সব সময় নতুন নতুন কাজ করার চিন্তা করতে হয়। এখানে ভুলে সংশোধনের সুযোগ খুব কম থাকে। বিশেষ করে বিয়েতে প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ ২য় বার করার সুযোগ থাকেনা ।
একজন মেয়ে ফটোগ্রাফার হিসেবে কি ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয় এরকম প্রশ্নের জবাবে নিশো জানান, “যেহেতু ঢাকার বেশিরভাগ বিয়ে রাতে হয়, এই জন্য অনেক রাতে বাসায় ফিরতে হয়। পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে এই পেশায় প্রথম সমস্যা হচ্ছে এটাই।”
ফারহানা নিশো’র ফারহানা ফটোগ্রাফার ( Farhana Photographer) নামে একটি ফেসবুক পেজ আছে। যার মাধ্যমে তিনি তার কাজের পরিধি বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ভিডিও কনটেনট নিয়েও কাজ করেন তিনি। ভবিষ্যতে অনেক দুর যেতে চান ফটোগ্রাফি করে। ফারহানা নিশোর টিমে সবসময় নতুনদের কাজের সুযোগ থাকবে বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন। বিশেষ করে মেয়েদের কাজ করার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা তিনি করবেন।