ডিজিটাল দুনিয়ায় ঈদ শুভেচ্ছা: ব্র্যান্ডদের কনটেন্ট কৌশল
আতিকুর রহমান
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 3, 2025 ইং
বিনোদন ডেস্ক: ঈদ এখন শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এক বিস্তৃত সাংস্কৃতিক আয়োজন। আর এই উৎসবের আবেগ, আনন্দ ও ভালোবাসার মুহূর্তগুলো এখন ডিজিটাল পরিসরে প্রবাহিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন বিজ্ঞাপন এবং ডিজিটাল ক্যাম্পেইন—সব মিলিয়ে ঈদ এখন এক নতুন অভিজ্ঞতা, যেখানে ব্র্যান্ডগুলোও নিজেদের নতুন রূপে হাজির করছে।
ঈদের আগে-পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখা যায়, নানা ধরনের কনটেন্টে ভরপুর ফিড। ভিডিও, ক্যারোসেল পোস্ট, ডিজিটাল শুভেচ্ছা কার্ড কিংবা ইন্টার্যাকটিভ স্টোরিজ—সব কিছুর পেছনেই রয়েছে সুপরিকল্পিত কনটেন্ট কৌশল। ব্র্যান্ডগুলো এখন আর শুধু ‘ঈদ মোবারক’ বলেই থেমে থাকে না। বরং তারা চেষ্টা করে এমন বার্তা দেওয়ার, যা দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নেয়।
এই হৃদয় ছোঁয়া বার্তার পেছনে কাজ করছে একটি সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক কৌশল—ইমোশনাল মার্কেটিং। একটি পণ্যের প্রচার যদি কোনো গল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়—যেমন মা-মেয়ের ঈদের প্রস্তুতি, প্রথম কুরবানি দেওয়া ছেলের অভিজ্ঞতা, কিংবা একা থাকা বৃদ্ধার সঙ্গে প্রতিবেশীর ঈদ ভাগ করে নেওয়া—তাহলে সেই কনটেন্ট শুধু দেখা হয় না, শেয়ার হয়, অনুভব হয়।
অনেক ব্র্যান্ড এবার ঈদে এমন ভিডিও প্রকাশ করেছে যা বিজ্ঞাপন হলেও ঠিক বিজ্ঞাপন মনে হয়নি। বরং ছোট একটি শর্ট ফিল্ম মনে হয়েছে, যার শেষে দর্শক হয়তো অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছে। এইরকম কনটেন্টের সফলতা শুধু ভিউ নয়, কমেন্ট সেকশনে জমে থাকা ভালোবাসাময় প্রতিক্রিয়া।
ব্র্যান্ডের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখার ক্ষেত্রেও কনটেন্ট একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। কেউ বাংলা কবিতার ছন্দে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে, কেউ আবার লোকজ ঐতিহ্যকে ডিজাইনে মেলে ধরছে। প্রযুক্তির ব্যবহারও উল্লেখযোগ্য—AR ফিল্টার, ইন্টার্যাকটিভ গেম, কিংবা কাস্টমাইজড গিফট কার্ড—সবই কনটেন্টের অংশ।
এই ঈদ কনটেন্টগুলোর পেছনে যাঁরা নিরলস পরিশ্রম করছেন, তাঁরা হচ্ছেন ব্র্যান্ড প্রোমোটর, কনটেন্ট কিউরেটর এবং ডিজিটাল মার্কেটিং টিম। ব্র্যান্ডের কনসেপ্ট থেকে শুরু করে পোস্টের সময়, ভিজ্যুয়ালের রঙ, ক্যাপশনের শব্দ—সবকিছুই পরিকল্পিত। একজন সোশ্যাল মিডিয়া স্ট্র্যাটেজিস্ট ঠিক করেন, কবে কী ধরনের পোস্ট যাবে, কখন ভিডিও রিলিজ হবে, কোন হ্যাশট্যাগ সবচেয়ে বেশি রিচ আনবে। আবার একজন কনটেন্ট রাইটার তৈরি করেন এমন ভাষা, যা পাঁচ সেকেন্ডেই দর্শকের মনে দাগ কাটে।
বর্তমানে অনেক নারী কাজ করছেন এই ব্র্যান্ড প্রোমোশন পেশায়। ঘরে বসেই তাঁরা কাজ করছেন বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড, ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম কিংবা হোমডেকোর কোম্পানির সঙ্গে। তাঁদের সৃজনশীলতা ও সাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ঈদ ক্যাম্পেইনগুলোকে আরও বিশ্বাসযোগ্য ও আবেগঘন করে তোলে। বলা যায়, এক একটি পোস্ট বা ভিডিওর পেছনে শুধু ব্র্যান্ড নয়, একটি সম্পূর্ণ টিম কাজ করে, যারা দর্শকের মনের ভাষা বোঝে, ঈদের আবেগ চিনে এবং ডিজিটাল দুনিয়ায় সেটাকে প্রাণ দেয়।
এই কনটেন্ট কৌশলের মধ্যে অন্যতম অংশীদার হচ্ছেন ব্র্যান্ড প্রোমোটররা। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে তাঁদের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে, মায়া চৌধুরী নামে একজন অভিজ্ঞ ব্র্যান্ড প্রোমোটর আনন্দবিনোদন–কে বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, কীভাবে আমাদের পণ্যগুলো দর্শকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। আমরা চেষ্টা করি আমাদের ফলোয়ারদের সবসময় সত্যিকারের এবং সেরা কনটেন্ট দিতে। একজন ব্র্যান্ড প্রোমোটর হিসেবে আমরা সবসময় এই বিশ্বাসটা ধরে রাখার চেষ্টা করি—যেটা আমাদের ওপর ব্র্যান্ড এবং দর্শক দু’পক্ষই রাখে।” এই বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতাই একজন সফল প্রোমোটরের পরিচয়, যিনি শুধু ব্র্যান্ড নয়—ভোক্তার সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ঈদের মতো আবেগঘন সময়ে, এই সম্পর্কই হয়ে ওঠে কনটেন্টের আসল শক্তি।
সবশেষে বলা যায়, ঈদ কনটেন্ট এখন আর নিছক প্রচার নয়—এটি হয়ে উঠেছে অনুভব, চিন্তা ও মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ। ডিজিটাল দুনিয়ায় এই শুভেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ে মূহূর্তেই, কিন্তু তার প্রভাব থেকে যায় অনেকদিন। যারা এই আবেগকে ধরতে পারছে, তারাই ঈদের বাজারে শুধু জায়গা নয়, হৃদয়ও দখল করছে।
আপনার মতামত লিখুন :