• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Bongosoft Ltd.

কনটেন্টে কণ্ঠস্বর: ডিজিটাল কণ্ঠে নারীর জাগরণ


FavIcon
আতিকুর রহমান
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 11, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ডিজিটাল কণ্ঠে নারীর জাগরণ ad728

বিনোদন ডেস্ক: এক সময় নারীর প্রকাশের জায়গা ছিল সীমিত, আর নিজের অবস্থান জানান দেওয়ার পথ ছিল কণ্টকাকীর্ণ। তবে প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতি আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রসারে সেই চিত্র এখন অনেকটাই বদলে গেছে। কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নারীরা নিজেদের পরিচয় গড়ছেন নতুন এক রূপে—দৃপ্ত, আত্মবিশ্বাসী ও সৃজনশীল।

আজ ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক কিংবা ব্লগ—সবখানেই নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। কেউ হচ্ছেন ঘরোয়া রেসিপির রাঁধুনি ও গাইড, কেউ বা ফ্যাশন ও বিউটি এক্সপার্ট। কেউ ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে শোনাচ্ছেন ভ্রমণের গল্প, আবার কেউ সহজ ভাষায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক সচেতনতামূলক বার্তা। কনটেন্টের বৈচিত্র্য যেমন বিস্ময়কর, তেমনি এই নারীদের যাত্রাপথ হয়ে উঠেছে অনুপ্রেরণার উৎস।

এই পথচলা শুধু আত্মপ্রকাশেই সীমাবদ্ধ নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আর্থিক স্বনির্ভরতার গল্প। কনটেন্ট তৈরি করে নারীরা আয় করছেন—সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন, ব্র্যান্ড চুক্তি, স্পন্সরশিপ কিংবা অনলাইন কোর্স বিক্রির মাধ্যমে। যাদের এক সময় নিজস্ব আয় বলতে কিছু ছিল না, তারা এখন পরিবারের অর্থনৈতিক সহায়ক থেকে উদ্যোক্তা পর্যন্ত হয়ে উঠছেন। এই রূপান্তর যেন সময়ের দাবিকেই প্রতিফলিত করে।

মডেল, উপস্থাপক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাজী শামীমা চৌধুরী বৃষ্টির মতে, ডিজিটাল মাধ্যম নারীদের জন্য একটি নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। তিনি বলেন, "একসময় নারীকে শুধু পেছনে রাখার চেষ্টাই ছিল। এখন সেই নারী নিজেই নিজের গল্প লিখছেন, কনটেন্ট তৈরি করছেন, লাখো মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠছেন। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম আমাদের কণ্ঠস্বরকে শুধু শোনা যায় না—এখন তা গর্জন তুলতে পারে। আমরা এখন আর অপেক্ষা করি না কারও সুযোগ দেওয়ার জন্য—আমরা নিজেরাই সুযোগ তৈরি করি। এই যে প্রতিদিন হাজারো নারী মোবাইল হাতে নিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান, লেখেন, শেখান বা সচেতনতা তৈরি করেন—এটাই তো একটা বিপ্লব। আমি বিশ্বাস করি, এই নারীরাই আগামী প্রজন্মের পথ দেখাবে—সাহস, আত্মবিশ্বাস আর সৃষ্টিশীলতার আলোয়।”

তবে এই সাফল্যের পথে কেবল ফুল বিছানো নয়। নারীদের পোহাতে হয় অনলাইন হয়রানি, কটূ মন্তব্য, পরিবার ও সমাজের অসহযোগিতা কিংবা প্রযুক্তিগত জটিলতার মতো চ্যালেঞ্জ। তবু তারা থেমে থাকেন না। বারবার উঠে দাঁড়িয়ে তারা প্রমাণ করছেন—দৃঢ় মনোবল আর সৃজনশীলতা থাকলে সব বাধা জয় করা সম্ভব।

এই নতুন যুগের নারীরা নিজেদের কণ্ঠস্বর তৈরি করছেন—একটি ক্যামেরার সামনে, একটি লেখার ভেতর, কিংবা একটি ভয়েস নোটে। প্রতিটি কনটেন্ট হয়ে উঠছে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার, নতুন চিন্তার দরজা খুলে দিচ্ছে অন্যদের জন্য। আজকের কিশোরী যে ভালোবাসে ছবি আঁকতে বা রান্না করতে, সে হয়তো আগামী দিনের সফল কনটেন্ট ক্রিয়েটর—নিজের প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে দেবে তার আলাদা আলো।

ডিজিটাল জগতে নারীর এই পদচারণা নিছক একটি ট্রেন্ড নয়—এটি একটি আন্দোলন, সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর হয়ে উঠছে শক্তি, আর প্রতিটি গল্প—একটি নতুন ইতিহাস। নারীর এই জাগরণ নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতের পথে এক আশাজাগানিয়া আলো।