ঈদের নতুন জামাকাপড়, কিন্তু স্বাস্থ্যের সঙ্গে ছাড় নয়!
আতিকুর রহমান
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 8, 2025 ইং
আনন্দ বিনোদন ডেস্ক: ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব আর নতুন পোশাকের গন্ধে ভরা দিন। বছরের সবচেয়ে প্রতীক্ষিত এই উৎসবকে ঘিরে দোকানপাটে ভিড়, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অর্ডার আর ঘরে ঘরে প্রস্তুতির ব্যস্ততা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নতুন জামাকাপড় ছাড়া যেন ঈদের আনন্দটাই অপূর্ণ থেকে যায়। তবে এই নতুন জামা যে কখনো কখনো স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, সেটি আমরা প্রায়ই খেয়াল করি না।
ঈদের সময় অনেকেই গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে ঘনঘন বাইরে যান, আত্মীয়স্বজনের বাসায় সময় কাটান বা রান্নাঘরের ব্যস্ততায় দীর্ঘসময় কাটান। এই সময় যদি জামা হয় ঘাম আটকে রাখে এমন ফ্যাব্রিকের, যেমন সিনথেটিক বা পলিয়েস্টার, তাহলে তা ত্বকে চুলকানি, র্যাশ, ফুসকুড়ি কিংবা অ্যাজমার মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। আবার অনেকেই নতুন জামা না ধুয়েই পরে ফেলেন, যা আরও বিপজ্জনক। কারণ ফ্যাব্রিক প্রসেসিংয়ে ব্যবহৃত রাসায়নিক, যেমন ফর্মালডিহাইড বা অ্যাজো-ডাইস ত্বকে জ্বালাপোড়া ও অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা তাই অন্তত একবার হালকা ডিটারজেন্টে নতুন জামা ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসক শারমিন আক্তার নিশি'র মতে, "শুধু কাপড় নয়, জামার সঙ্গে ব্যবহৃত গ্লিটারি বা সেকুইন ওয়র্ক, আঁটসাঁট ফিটিংস, এবং ভারী অলংকারও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গ্লিটার ও সেকুইন কাপড় ঘর্ষণের মাধ্যমে ত্বকে দাগ বা ছত্রাকের সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। একইভাবে টাইট জামা ও দেহচাপা পোশাক দীর্ঘক্ষণ পরলে ত্বকের স্বাভাবিক বায়ুচলাচল ব্যাহত হয়, ফলে ত্বকের ঘর্মগ্রন্থি বন্ধ হয়ে তাপ-ঘাম জাতীয় সমস্যা বাড়ে।"
অনেকে আবার ঈদের দিনে নতুন মেকআপ ব্যবহার করেন। ব্র্যান্ডহীন বা ত্বকে পরীক্ষা না করা প্রসাধনী হঠাৎ ব্যবহার করলে ত্বকে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। চোখ, ঠোঁট বা গালের চারপাশে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বা ডার্মাটোলজিস্ট-পরীক্ষিত কসমেটিকস ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
জুতো নির্বাচনেও অনেক সময় ফ্যাশনের নামে স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনি। হাই হিল বা কড়া ফোমের জুতোতে একদিন হাঁটার পর পায়ের আঙুলে ফোস্কা, গোড়ালিতে ব্যথা, এমনকি কোমর ও মেরুদণ্ডে চাপ অনুভব করা অস্বাভাবিক নয়। চিকিৎসকদের মতে, যারা দীর্ঘসময় হাঁটাচলার মধ্যে থাকবেন, তাদের জন্য নরম কুশনযুক্ত ও সঠিক ফিটিংয়ের জুতো ব্যবহার শ্রেয়।
ঈদের পোশাক ও সাজসজ্জা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয় নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শারীরিক আর মানসিক সুস্থতার গভীর সম্পর্ক। শরীর যদি অস্বস্তিতে থাকে, তবে ঈদের মূল আনন্দটাই ম্লান হয়ে যায়। সুতরাং পোশাক হোক ত্বক-বান্ধব, প্রসাধনী হোক নিরাপদ, আর ফ্যাশন হোক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই ঈদে ফ্যাশনের সঙ্গে একটি বার্তাও ছড়িয়ে পড়ুক—"স্বাস্থ্যের সঙ্গে নয় কোনো ছাড়!" নতুন জামাকাপড় হোক আনন্দের প্রতীক, কিন্তু তাতে যেন লুকিয়ে না থাকে অস্বস্তির কোনো ছায়া।
আপনার মতামত লিখুন :