একান্ত সাক্ষাৎকারে জনপ্রিয় নির্মাতা ও ঢাকা মডেল এজেন্সি'র কর্ণধার এইচ এম পিয়াল
এস.এ.এম সুমন
নিউজ প্রকাশের তারিখ : May 15, 2025 ইং
দেশের একজন জনপ্রিয় নির্মাতা এইচ এম পিয়াল। মডেলিং শিল্প থেকে ফ্যাশন শো, নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ সবকিছুতেই যেন তিনি সিদ্ধ হস্ত, সুনিপুণ কারিগর। বিনোদন সাংবাদিকতায়ও যার রয়েছে সুখ্যাতি। এরই মধ্যে তিনি আবারো নিজেকে তুলে ধরেছেন নাট্য পরিচালক হিসেবে।
মিডিয়াতে আসার গল্প জানতে চাইলে পিয়াল বলেন
কোন পরিকল্পনা করে মিডিয়াতে আসিনি , এই জগতের প্রতি ছোটবেলা থেকে একটা টান অনুভব করতাম , একদিন মনে হল কিছু করতে হলে বাড়ি ছাড়তে হবে ছেড়ে দিলাম এইতো - চলছে
বিয়ে ঘর সংসার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন
আমি ভাই বাউন্ডারির বাহিরে চলা একজন মানুষ , বিয়ে ঘর সংসার বাচ্চা বড় করা , এসব আমাকে তেমন একটা টানে না । যদি কখনও প্রয়োজন মনে করি বিয়ে করতেও পারি বাট আমার কাছে ওতটা গুরুপ্তপুরন না ।
এখন কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন ?
কই আমিতো ব্যস্ত না , যেভাবে চলছি এটা আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন , সব কিছুই কাজ রিলেটেড এভাবেই প্রতিদিন কেটে যাচ্ছে , আলাদা ভাবে বলি না , আমি ব্যস্ত কিংবা ফ্রি ।
ঢাকা মডেল এজেন্সি সম্পর্কে দুইলাইন বলেন
ঢাকা মডেল এজেন্সি আমার নিঃশ্বাসের মত , খুব ক্ষুদ্র থেকে এই এজেন্সি গড়ে তুলেছি , সময়ের সাথে সাথে এটা তুমুল জনপ্রিয় একটা মডেলিং প্রতিষ্ঠান । আমি যেমন এই প্রতিষ্ঠান কে জন্ম দিয়েছি , এই প্রতিষ্ঠানও এই শহরে আমাকে জন্ম দিয়েছে , এবং শিখিয়েছে অনেক কিছু । ঢাকা মডেল এজেন্সি আমার ভালবাসা ও স্বপ্নের যায়গা ।
মিডিয়াতে না আসলে কি করতেন ?
পিয়াল কিছু সময় চুপ থেকে খোলামেলা বলতে শুরু করে । কি করতাম ওইটা আসলে অগ্রিম বলা মুশকিল তবে এটা বলতে পারি , বাড়ি না ছাড়লে এলাকার বাজারে এত দিনে একটা মুদি দোকান থাকতো ৩ টা বাচ্চা হইতো , বুড়া না হওয়া পর্যন্ত ক্যারাম আর ফুটবল খেলে কাটিয়ে দিতাম হাহাহাহা ।
মিডিয়াতে অনেক নতুনরা এসে হারিয়ে যাচ্ছে ,কারন কি ?
রাতারাতি জনপ্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা , এই মাধ্যমে স্ট্রাগল আসল জিনিস এটা যে মেনে নিতে না পারা । প্রফেশনালিজম এর অভাব , এমন অনেক কারণে নতুনরা হারিয়ে যাচ্ছে ।
আপনার কাছে বাংলাদেশের সুপারস্টার কে ?
হাহাহা আমি নিজেই তো একজন সুপারস্টার , কি অবাক হইলেন ? দেখেন স্বাধীনতার পরে এই দেশে টেলিভিশন, এফএ্ম, পত্রিকা ম্যাগাজিন, প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড হইছে , একটা মডেলিং এজেন্সি কে ব্র্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশে আমিই প্রথম দাড় করাইছি । সেদিক থেকে আমিও একজন সুপারস্টার ।
আমার কাছে অনন্ত জলিল সুপারস্টার কারন তার হাত ধরে বাংলাদেশ ডিজিটাল সিনেমা জগতে পা রেখেছে ।
আমার কাছে হাবিব ওয়াহিদ সুপারস্টার কারন হাবিব ওয়াহিদের হাত ধরে বাংলা গানের মিউজিকে চেঞ্জ এসেছে ।
মিডিয়াতে কাজ করতে নতুনদের জন্য কি পরামর্শ দিবেন ?
অনেকে পরিচালক কিংবা প্রযোজক কিংবা এদের দালাল কিংবা দোসর আপনাকে নিশ্চিত সুযোগের গ্যারান্টি দিয়ে আপনার কাছ থেকে বেশ মোটা অংকের টাকা নেবে, এরপর আপনাকে কয়েক মাস কিংবা বছর ঘুরাবে । এরপরও আপনি আদৌ সুযোগ নাও পেতে পারেন । বাংলা সিনেমাশিল্প ইন্ডাস্ট্রির লোকজনের কাছে একটি টার্ম বেশ পরিচত । “GIVE AND TAKE” । মানে আপনি কিছু দেবেন, বিনিময়ে আপনি কিছু পাবেন । কিন্তু এখানেই সমস্যা। শুধু বাংলা অর্থের মত পরিস্কার নয় এটি । সাধারনত যে সব তরুণীরা নায়িকা হতে যায়, এটি তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়। মানে ঐ সকল তরুণীকে গোপনে ধান্দাবাজ পরিচালক কিংবা প্রযোজকদের সাথে সিনেমা চুক্তির আগেই দৈহিক মিলনে জড়িত হতে হয় । সন্তুষ্টি করতে পারলেই, সুযোগ মেলে অবশেষে । নতুবা নয় । এটি শুধু ঢালিউড নয়, এই প্রথা বলিউডেও আছে । অনেকেই জানেন না এটা । তরুণদের ক্ষেত্রে তাই সুযোগ মেলা তরুণীদের চেয়ে অনেক অনেক কঠিন । এই কারণেই একেবারে নায়ক কিংবা ভিলেন হতে না চেয়ে, আস্তে আস্তে এগুতে হয় ।
আপনার দর্শন কি ?
আমি যেহেতু শো বিজে কাজ করি আমার দর্শন একটাই যেটা আমি ধারন করি লালন করি হল "শো মাস্ট গো অন"
কীভাবে মডেলিং- এ ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায় ? সেই সম্পর্কে পিয়াল বলেন
বর্তমানে মিডিয়া জগতে প্রবেশ করার প্রথম ধাপ হচ্ছে মডেলিং। আধুনিক যুগে মডেলিং এর গুরুত্ব সর্বক্ষেত্রেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মডেলিং করতে চাইলে এই ধরণের বিভিন্ন মানসিক প্রস্তুতি আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। মানুষিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিক প্রস্তুতি নেওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আকর্ষণীয় মডেলের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে তাই নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার, নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্রাম ইত্যাদি বিভিন্ন নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। মডেলিং এর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে দেওয়া হল।
ফিটনেস বজায় রাখা
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করা
ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়া
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করা
র্যাম্পে হাঁটার অনুশীলন করা
আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা
প্রত্যাখ্যান মোকাবেলা করা
চাপ সামলানো এবং সুন্দর আচরণ করা
সকলের সাথে যোগাযোগ বা সম্পর্ক গড়ে তোলার দক্ষতা
ভাইরাল ভিউ এই যায়গা থেকে আমরা বাহির হতে পারছি না কেন ?
নাটকের প্রচারস্থান দখল করে নিয়েছে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে নাটক অনলাইনকেন্দ্রিক, বিশেষ করে ইউটিউব চ্যানেল। দর্শকরাও নিজেদের সময়-সুযোগ মতো পছন্দের নাটক দেখে নিতে পারছেন অনলাইনে। এ কারণে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। আর তাতেই প্রাধান্য পাচ্ছে ‘ভিউ’ নামক একটি শব্দ। কারণ, যত ভিউ তত টাকা। স্বাভাবিকভাবে ভিউকে টার্গেট করেই নির্মিত হয় নাটক। তবে ভিউ যখন লক্ষ্য হয়, তখন নাটক হয়ে যায় ‘কনটেন্ট’। বেশি ভিউয়ের আশায় প্রযোজক, নির্মাতা থেকে শুরু করে শিল্পীরাও এ ভার্চুয়াল লড়াইয়ে মত্ত। ভিউ বাড়াতে দেওয়া হচ্ছে নাটকগুলোর অদ্ভুত, অশ্লীল, চটকদার ও কুরুচিপূর্ণ সব নাম। যা আমাদের দেশের শিল্প সংস্কৃতিকে বিশ্বে অত্যন্ত অমর্যাদাকরভাবে তুলে ধরছে। ব্যবসায়িক চিন্তা করে দিন দিন বাংলা নাটকের ঐতিহ্য বিলীনের পথে। এসব দেখার যেন কেউ নেই। বর্তমান সময়ে একটি নাটকের মান নির্ণয় করা হয় ইউটিউব চ্যানেলে কত ভিউ হলো তার ওপর। মানের দিক বিবেচনা না করে, ভিউয়ের ওপর সেটার দর্শকপ্রিয়তা বিচার করা হচ্ছে। ফলে নির্মাতা-শিল্পীরাও ভিউয়ের পেছনে ছুটছেন। তাতে করে নাটকের মান যেমন হারিয়ে যাচ্ছে, তেমনি করে তৈরি হচ্ছে কাণ্ডজ্ঞ্যানহীন অদক্ষ কিছু শিল্পী।
পারছেন না আর ভবিষ্যতেও পারবেন না কারন ভিউ এখন বিজনেস ভিউ না হলে বিজনেস নাই , তাই চাইলেও এটা কে উপেক্ষা করতে পারবেন না ।
যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বাংলাদেশের সিনেমাগুলো পশ্চিম বঙ্গে ব্যবসা সফল না হওয়ার কারণ কী?
দেখুন আমি সিনেয়ার মানুষ না এই সম্পর্কে আমার ধারনাও অস্পষ্ট , তারপরেও আপনি যখন প্রশ্ন করেছেন আমার মত করেই উত্তর দিচ্ছি
পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ - দু’টি ভিন্ন স্থান হিসেবে বিবেচ্য হলেও, মাতৃভাষা বাংলা। আর আমরা বাঙালি। কিন্তু, আমরা বাঙালি হলেও, আমাদের কথ্য ভাষায় অনেক তফাৎ রয়েছে। আমি কলকাতার বাঙালি। কর্মসূত্রে হোক, কিংবা বেড়াতে যাওয়ার কারণে, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে আমার যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আর তাতে আমি দেখেছি, বিভিন্ন জেলায় বাংলা ভাষা বিভিন্ন স্টাইলে বলা হয়। অর্থাৎ শব্দের উচ্চারণগত রকমফের। অনেক সময়তেই তা এমন বিকৃত করে বলা হয়, যা কোনওভাবেই লেখা যায় না।
আমি এখানে ত্রিপুরা এবং অসমের বাঙালিদের আলোচনার মধ্যে আনছি না। ভারতের ওই দু’টি রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র ত্রিপুরা পুরোপুরি বাংলাভাষী রাজ্য হলেও, সেখানে ককবরো ভাষার প্রাধান্য রয়েছে, যেমন অসমে অহমিয়া ভাষার।
এবার আসি সিনেমার কথায়। বর্তমান যুগে সিনেমা সফল করে তোলার জন্য সবার আগে ভালো গল্প দরকার। আর তাকে দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলে সিনেমার ভাষা। সেই ভাষা অনেকাংশেই চলতি ভাষা নির্ভর। অর্থাৎ পোশাকি ভাষা যেমন থাকবে, তেমনই পথ চলতি মানুষের ব্যবহৃত ভাষার ব্যবহার করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মতো বাংলাদেশেও কথ্য বাংলা ভাষার বিভিন্ন রূপ রয়েছে। আর সেই ধরনের বাংলা পশ্চিমবঙ্গে বলা হয় না - না গ্রামে, আর না শহরে। বাংলাদেশে বাংলা বলার ক্ষেত্রে ‘স’ আর ‘জ’-এর টান লক্ষণীয়। সেখানে সেটা স্টাইলিশ বাংলা হলেও, ভারতীয় বাঙালিরা সেভাবে কথা বলতে ভালোবাসেন না। বরং, পশ্চিমবঙ্গের বাংলা, বিশেষ করে কলকাতার বাংলায় ইংরেজি, হিন্দি শব্দের প্রভাব অত্য়ধিক বেশি লক্ষণীয়।
আর এই কারণেই যৌথ প্রযোজনায় ছবি তৈরি হলেও, বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পশ্চিমবঙ্গে ভালো বাজার করতে পারে না। তাছাড়া, বাংলাদেশে তৈরি চলচ্চিত্র অনেকাংশেই ভারতে দক্ষিণী ডাবিং ছবি দেখার মতো মনে হয়। ডাবিং ছবি সেইভাবে চলচ্চিত্রপ্রেমী ও গুণগ্রাহীদের নজর ও মনোযোগ কাড়তে পারে না।
অভিনয় দক্ষতা, ক্যামেরার কাজের পাশাপাশি ফিল্ম এডিটিংয়ের দক্ষতাও সিনেমার ভালো বাজার করা বা না করার একটা বড়ো কারণ। পশ্চিমবঙ্গে অধিকাংশ বাঙালিই টলিউডের সিনেমা দেখেন না, যদি না তাতে মেরিট থাকে। ভারতীয় হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের লোকজনের উপরে বলিউড এবং হলিউডের ছবির প্রভাব খুব বেশি। এই দুই ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় দক্ষতা, ক্যামেরার ব্যবহার এবং এডিটিংয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে, পশ্চিমবঙ্গবাসীর ছবির রসনা সেই অনুযায়ী বিবর্তিত হয়েছে।
মানুষ সময় ও পয়সা খরচ করে সিনেমা দেখেন বিনোদনের জন্য এবং কোনও বিশেষ অঞ্চল বা দেশের সিনেমা যদি সেই ব্যক্তিগত মূল্যাঙ্কের মান পেরতে ব্যর্থ হয়, তা হলে মানুষ সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। শুধু বাংলাদেশের ছবিই নয়, পশ্চিমবঙ্গে খোদ টলিউডে তৈরি বহু ছবি ব্যর্থ। কারণ, বাঙালির তাতে আগ্রহ নেই।
আপনার মতামত লিখুন :