• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Bongosoft Ltd.

গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখাতে চাচ্ছেন এম এ পাস চা ওয়ালা


FavIcon
আতিকুর রহমান
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Oct 7, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ad728

আনন্দ বিনোদন ডেস্ক : বাংলাদেশের এক সাধারণ চা বিক্রেতা থেকে দেশের অনুপ্রেরণার প্রতীকে পরিণত হওয়া “এম এ পাস চা ওয়ালা” এবার যাচ্ছেন গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পাতায় নিজের নাম লেখাতে। চায়ের কাপ হাতে শুরু করা তার ব্যতিক্রমী যাত্রা এখন ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বমঞ্চে।

চলতি মাসে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে “এম এ পাস চা ওয়ালা’স গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড টি ফেস্টিভ্যাল ২০২৫”। আয়োজকদের লক্ষ্য—এক দিনে ৫০ হাজারেরও বেশি চা পরিবেশন ও অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়া। এম এ পাস চা ওয়ালা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, এক কাপ চা শুধু পানীয় নয়—এটা মানুষের হৃদয়কে যুক্ত করার মাধ্যম। গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে বাংলাদেশের নাম উঠুক, এটাই আমার স্বপ্ন।”

আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, দেশের খ্যাতনামা শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন এই মহোৎসবে। চা শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, এ উদ্যোগ বাংলাদেশের চা সংস্কৃতিকে বৈশ্বিক অঙ্গনে নতুনভাবে তুলে ধরবে। একই সঙ্গে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও তরুণ সমাজের জন্য হবে এক অনন্য অনুপ্রেরণা। দেশজুড়ে এখন একটাই আলোচনা—কবে ইতিহাস গড়বেন এম এ পাস চা ওয়ালা। যদি সবকিছু পরিকল্পনামতো এগোয়, তবে অক্টোবর মাসেই গিনিস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের পাতায় যুক্ত হবে বাংলাদেশের এই গর্বের নাম।

“মাস্টার্স পাস একজন যুবক চায়ের দোকান দেবেন”—শুনলেই একসময় অনেকে অবাক হতেন, কেউ কেউ বিদ্রূপ করতেন। বলা হতো, ‘কফি শপ বা আধুনিক ক্যাফে হলে মানাতো, কিন্তু চায়ের দোকান?’ কিন্তু সেইসব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে অগ্রাহ্য করে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, যিনি এখন সবার কাছে পরিচিত “এম এ পাস চা ওয়ালা” নামে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সন্তান শহিদুল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ২০১৩ সালে। পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য বহু চেষ্টা করেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পাননি। এরপর ফ্রিজের ব্যবসা, শিক্ষকতা—সবকিছু চেষ্টা করেও নিজের পথ খুঁজে পাননি। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন তিনি। এরপর আবারও নতুন স্বপ্ন দেখেন—একটি অনলাইন স্কুল প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

দীর্ঘ সংগ্রামের পর শহিদুল নতুন সিদ্ধান্ত নেন—চায়ের দোকান খুলবেন। পরিবার-পরিজন ও আশপাশের মানুষ আপত্তি জানালেও তিনি থামেননি। ২০২২ সালের অক্টোবরের শুরুতে রাজধানীর ভাটারা কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে যাত্রা শুরু করে “এম এ পাস চা ওয়ালা”। দোকান ভাড়া নিয়েও পড়তে হয়েছিল বাধার মুখে। অনেকেই চা দোকান শুনে ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু শহিদুলের জেদ ও আত্মবিশ্বাস থামেনি।

তিনি বলেন, “এই নামের পেছনে দুটি কারণ আছে—প্রথমত, নাম শুনেই যেন সবাই আকৃষ্ট হয়; দ্বিতীয়ত, শিক্ষিত বেকার তরুণরা যেন অনুপ্রাণিত হয় এবং কোনো কাজকে ছোট না ভাবে।”

‘এম এ পাস চা ওয়ালা’র দোকান সাজানো হয়েছে যত্নে ও রুচিতে। তামার তৈরি কেতলি, চা তৈরির নানা সরঞ্জাম, আরামদায়ক আসবাব—সব মিলিয়ে দোকানটি তৈরি করেছে আলাদা পরিবেশ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকরিজীবীরা প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে।

দোকানে পাওয়া যায় নানা রকম চা—ইরানি জাফরান চা, ইরানি দুধ চা, স্পেশাল মাসালা দুধ চা, গরুর দুধ চা—সবই তুলনামূলকভাবে কম দামে। সঙ্গে আছে মাংসের স্পেশাল শিঙাড়া, এবং ঠান্ডা পানীয়ের মধ্যে আইস টি, মকটেল, জুস, লাচ্ছি, মিল্ক শেক, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, মটু শর্মা ও মটকা মিট বক্স।

“এম এ পাস চা ওয়ালা” এখন শুধু একটি দোকান নয়—এটি এক সংগ্রামী তরুণের আত্মসম্মান ও ইতিবাচক চিন্তার প্রতীক। তাঁর গিনিস রেকর্ডের প্রচেষ্টা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেয়—কোনো কাজই ছোট নয়, মনোভাবই বড়।