• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Bongosoft Ltd.

সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন অভিভাবক শূন্য


FavIcon
Ananda Binodon
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Aug 8, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: ছবি সংগ্রহীত : ad728

এস.এ.এম সুমন : 

সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন অভিভাবক শূন্য

একসময় বাংলাদেশে সংস্কৃতির জগৎ ছিল উজ্জ্বল নক্ষত্রে ভরপুর। সংগীত, নাটক, চলচ্চিত্র, চিত্রকলা—প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিল দিকপাল শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মী, যারা শুধু শিল্পের মান উন্নত করতেন না, বরং নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই প্রেক্ষাপট অনেক বদলে গেছে। এখন যেন সাংস্কৃতিক অঙ্গন অভিভাবকহীন এক সমুদ্রে ভাসছে।

পথপ্রদর্শকের অভাব
প্রবীণ শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন অথবা কর্মক্ষেত্র থেকে সরে গেছেন। নতুন প্রজন্মের মধ্যে প্রতিভা থাকলেও, সেই প্রতিভা সঠিক পথে পরিচালনা করার মতো অভিজ্ঞ নেতৃত্ব খুবই কম। আগে যেখানে নন্দিত ব্যক্তিত্বরা শিল্পীদের দিকনির্দেশনা দিতেন, এখন সেখানে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা ও জনপ্রিয়তার দৌড় বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।

বাণিজ্যিকতার প্রভাব
বাংলাদেশের সংগীত, নাটক ও চলচ্চিত্রে বাণিজ্যিকীকরণ এক অদৃশ্য চাপ সৃষ্টি করেছে। মানের চেয়ে এখন গুরুত্ব পাচ্ছে দর্শকসংখ্যা ও তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা। ফলে অনেক শিল্পী ও প্রযোজক সহজ পথ বেছে নিচ্ছেন—গভীরতা ও সৃজনশীলতার বদলে তাৎক্ষণিক বিনোদনে মন দিচ্ছেন।

সংস্কৃতি থেকে রাজনীতির ছায়া
অনেক ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রাজনৈতিক প্রভাবও পড়েছে। সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে পেশাদারিত্বের চেয়ে দলীয় পরিচয় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। এতে যোগ্য ও প্রতিভাবান ব্যক্তিরা পিছিয়ে পড়ছেন, যা সামগ্রিক সংস্কৃতির মান কমিয়ে দিচ্ছে।

প্রতিভা আছে, দিকনির্দেশনা নেই
বাংলাদেশে এখনো অসংখ্য প্রতিভাবান গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক, কবি ও চিত্রশিল্পী রয়েছেন। কিন্তু তাদের বিকাশের জন্য দরকার সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ, নীতি এবং মান নিয়ন্ত্রণ। অভিভাবক শূন্যতার কারণে প্রতিভাগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে, অনেকে হতাশ হয়ে ক্ষেত্র পরিবর্তন করছেন।

সমাধানের পথ

সংস্কৃতির মান ধরে রাখতে হলে নতুন করে অভিভাবকত্ব গড়ে তোলা জরুরি। প্রবীণ ও অভিজ্ঞ শিল্পীদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা, তরুণদের জন্য প্রশিক্ষণ ও পরামর্শমূলক কর্মশালা আয়োজন, এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা দরকার।
একই সঙ্গে দর্শকদের মধ্যেও মানসম্মত শিল্পকর্মের প্রতি আগ্রহ ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা এবং আগামী প্রজন্মের হাতে সঠিকভাবে তুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন দিকনির্দেশক অভিভাবক। নইলে ‘সাংস্কৃতিক অঙ্গন অভিভাবক শূন্য’—এই আক্ষেপ হয়তো আগামী দিনে আরও তীব্র হয়ে উঠবে।