• ঢাকা
  • | বঙ্গাব্দ
Bongosoft Ltd.

পেশাদার উপস্থাপক: শব্দের শিল্পী, মঞ্চের কারিগর


FavIcon
আতিকুর রহমান
নিউজ প্রকাশের তারিখ : Jun 10, 2025 ইং
ছবির ক্যাপশন: পেশাদার উপস্থাপক: শব্দের শিল্পী, মঞ্চের কারিগর ad728

আনন্দ বিনোদন ডেস্ক: তারা মঞ্চে ওঠেন শব্দকে হাতিয়ার করে, দর্শকের দৃষ্টি আটকে রাখেন নিখুঁত ভঙ্গিমায়, আর মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে দেন পরিবেশের আবহ। তারা পেশাদার উপস্থাপক—যাদের জন্য একটি অনুষ্ঠান প্রাণ পায়, একটি আয়োজন পায় শৃঙ্খলা, আর শ্রোতারা খুঁজে পান আকর্ষণ।

বর্তমান সময়ে উপস্থাপনাও একক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধুমাত্র রেডিও বা টেলিভিশনের পর্দায় নয়, বরং কর্পোরেট সম্মেলন, আন্তর্জাতিক সেমিনার, প্রোডাক্ট লঞ্চিং, ওয়ার্কশপ কিংবা ওয়েবিনার—সব জায়গাতেই পেশাদার উপস্থাপকদের উপস্থিতি আবশ্যক হয়ে উঠেছে। তারা শুধু অনুষ্ঠান পরিচালনাই করেন না, বরং অনুষ্ঠানকে নিরবিচারে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা, সময়জ্ঞান, যোগাযোগ ও কৌশলের সম্মিলিত প্রয়োগ ঘটান।

পেশাদার উপস্থাপকদের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের বাকপ্রতিভা, উপস্থিত বুদ্ধি ও আত্মবিশ্বাসের ওপর। তারা জানেন কোন মুহূর্তে কী বলতে হবে, কাকে কিভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, আবার কোন সময় পরিস্থিতিকে কৌতুক দিয়ে হালকা করতে হবে। দর্শক কখন আগ্রহ হারাতে শুরু করেছে—এই সংকেতও তারা বুঝে ফেলেন পলকে। এক ধরনের অনুভূতি ও মঞ্চ-সংবেদনশীলতা তৈরি হয় তাদের অভিজ্ঞতায়, যা অনুশীলন ছাড়া অর্জন সম্ভব নয়।

একজন সফল পেশাদার উপস্থাপক সাদিয়া রশ্নি সূচনার মতে, “উপস্থাপনা আমার কাছে শুধু মাইক্রোফোন হাতে পেশাদার একটা দায়িত্বই নয়—বরং এটি এক ধরনের দায়িত্বশীল শিল্প/শিল্পচর্চার মাধ্যম। এখানে প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখতে হয়, পরিস্থিতি অনুযায়ী ভঙ্গি ও ভাষা বদলাতে হয়। আমি টেলিভিশনের পর্দা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মঞ্চ পর্যন্ত কাজ করেছি, ছাত্রজীবনে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েও একাধিকবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাঁড়িয়েছি সেটা পেশাদার উপস্থাপক হবার আগেই এবং প্রতিবারই নতুন করে শিখেছি—কীভাবে শব্দ দিয়ে আবেগ ছুঁয়ে যাওয়া যায়। উপস্থাপনার এই জগতে প্রবেশ করতে চাইলে প্রতি মূহুর্তের চ্যালেঞ্জ নেবার মানসিকতার সাথে সাথে আত্মনিয়ম আর অনুশীলনের বিকল্প নেই।”

এই পেশায় প্রতিষ্ঠা পেতে হলে প্রয়োজন আত্মনিয়ম, অধ্যবসায় এবং নিরবিচারে শেখার আগ্রহ। অনেকেই এ পেশায় আসেন শিক্ষাজীবনে বিতর্ক, উপস্থাপনা বা নাটকের মাধ্যমে হাত পাকিয়ে। কেউ কেউ মিডিয়া বা কর্পোরেট ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে পেশাদার উপস্থাপনায় যুক্ত হন। বর্তমান যুগে ইউটিউব, পডকাস্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া তাদের জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। ফলে একজন উপস্থাপক চাইলে নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলতে পারেন স্বাধীনভাবেও।

তবে এই পেশা শুধু আলোর দিকেই নিয়ে যায় না। প্রচণ্ড মানসিক চাপ, দীর্ঘ সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখা, প্রতিনিয়ত নতুন প্রেক্ষাপটে মানিয়ে নেওয়া, কখনো অনভিপ্রেত মন্তব্য বা পরিস্থিতি সামলানো—এসব চ্যালেঞ্জও থাকে নেপথ্যে। তবুও, যারা এই পেশাকে ভালোবাসেন, তাদের জন্য প্রতিটি মঞ্চ একেকটি রঙিন ক্যানভাস—যেখানে প্রতিবার আঁকা হয় নতুন কিছু।

আজকের দিনে একজন সফল উপস্থাপক কেবল ঘোষণা পাঠকারী নন; তিনি গল্পকার, দার্শনিক, পথপ্রদর্শক। শব্দের শিল্পী হিসেবে তিনি তৈরি করেন ধ্বনির এক অনন্য আবহ, আর মঞ্চের কারিগর হয়ে তিনি রচনা করেন স্মরণীয় মুহূর্ত। শব্দ আর সময়ের এই সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এক অনির্বচনীয় নন্দন—যার নাম পেশাদার উপস্থাপনা।